Sunday, December 28, 2014

অবশেষে জিহাদ উদ্ধার



শাহজাহানপুরে পাইপের মধ্যে পড়ে যাওয়া জিহাদ নামের শিশুটিকে দীর্ঘ প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান স্থগিত করার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মাথায় গতকাল শনিবার বেলা তিনটার দিকে সাধারণ মানুষের চেষ্টায় পাইপের ভেতর থেকে শিশু জিহাদকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আইকন কম্পানির ফারুকের নেতৃত্বে উদ্ধারে ব্যবহৃত বিশেষ যন্ত্র ক্যাচারটি তৈরি করেন আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল কাদের চৌধুরী ও আব্দুল মজিদ। গাড়ি মেকানিক ফারুক হোসেনের সঙ্গে সাভারের আরো কয়েকজন মেকানিক একত্রিত হয়ে এই ক্যাচারটি তৈরি করেন। এটির সাহায্যে জিহাদকে প্রায় ২৩৫ ফুট নিচ থেকে টেনে তোলা হয়েছে। এরপর তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিয়াজ মোর্শেদ তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, জিহাদ উদ্ধার হওয়ার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই মারা গেছে।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গণমাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না দেখে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায় তিনি ঘটনাস্থলে লোহার খাঁচা নিয়ে যান। রাতে একবার খাঁচাটি ভেতরে ঢুকিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তখন উদ্ধার করা যায়নি। খাঁচাটি কিছুটা ভেঙে যাওয়ায় সারা রাত ধরে তিনি এটি মেরামত করেন। পরে আরও কয়েকজনকে নিয়ে আবু বকর সিদ্দিক দুটি খাঁচা ভেতরে ঢোকান। এরপর তাঁরা দেখেন, খাঁচায় কিছু একটা আটকে গেছে। ধীরে ধীরে খাঁচাটি টেনে তোলা হয়। এভাবে উদ্ধার হয় জিহাদ। আবু বকর সিদ্দিকের ভাষ্য, উদ্ধারের সময় জিহাদ অচেতন ছিল। তার চোখ বন্ধ ছিল। পরনে একটি প্যান্ট ছিল। শরীর কালো হয়ে গিয়েছিল। শিশুটির ওপর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সেখানে ধাক্কাধাক্কি ও হট্টগোল শুরু হয়। অনেকে মাটিতে গড়িয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন।
শিশু জিহাদকে উদ্ধারের পরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা খাদিজা আক্তার আহাজারি করছেন। তিনি বলেন, 'স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ যাঁরা জিহাদকে উদ্ধার করার নামে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি তাঁদের বিচার চাই।' তিনি বলেন, 'তাঁরা যদি বিভিন্ন ধরনের কথা না বলতেন, যদি ভালোভাবে খুঁজে দেখতেন, তাহলে আমার বাচ্চাকে আমি কালকেই পেতাম।' জিহাদের মা অভিযোগ করেন, গতকাল রাতে তাঁর স্বামী ও ভাইকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পানির পাম্পের কাছে এক হাজারের মতো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা পাম্পের কয়েকটি টিন শেডের ঘরে ভাঙচুর চালান। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন। এ সময়ে পুলিশ তাঁদের হালকা লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়।
গতকাল সকাল থেকে পাইপের ভেতর শিশুটির পরে যাওয়া ও তার অবস্থান নিয়ে সংশয় বাড়তে থাকে। বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান সাংবাদিকদের জানান, ২৮০ ফুট গভীরে ক্যামেরা দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। সেখানে শক্ত স্তর থাকায় ক্যামেরা আর নামানো যায়নি বলে দাবি করে ফাঢার সার্ভিস। শিশুটির অস্তিত্ব না পাওয়ায় উদ্ধারকাজ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় ফায়ার সার্ভিস। তবে ওই স্তরের নিচে শিশুটি রয়েছে কি না, তা নিয়ে তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
শিশু জিহাদের বাড়ি ওই পানির পাম্পের পাশেই। এ/৪০ নম্বরের ওই বাড়ির দোতলায় সাবলেটে থাকে তারা। জিহাদরা তিন ভাইবোন। বড় মেয়ে স্বর্ণা (১৩), মেজো ছেলে ঈশান (৬) ও সবচেয়ে ছোট জিহাদ (৪)। গত শুক্রবার দুপুরে ভাত খেয়ে দুই পাশে দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি ঘুমিয়েছিলেন। ঘরের দরজা খোলা ছিল। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখেন জিহাদ পাশে নেই।-ডেসটিনি রিপোর্ট

No comments:

Post a Comment