
নজরুল মৃধা, রংপুর
আনুষ্ঠানিকভাবে শীত ঋতু আসতে এখনো ক'দিন বাকি। এরই মধ্যে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে কাঁপতে শুরু করেছে। শীতের কারণে এ অঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ দরিদ্র শীতার্ত মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগ আরো বাড়ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দুভর্োগ চরমে উঠেছে। গত ৩ দিন থেকে চলছে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। কোথাও সূর্য়ের আলো দেখা গেলে তাও ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য। গতকাল সকাল থেকে সারাদিন ছিল আকাশ ছিল কুয়াশাচ্ছন; সেই সাথে হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীত। ফলে সূর্যের দেখা মেলেনি। বিরুপ আবহাওয়ায় জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আতিকুল ইসলাম জানান, গতকাল বুধবার রংপুর ও আশপাশ এলাকায় সর্বনিম্ন তাপ মাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। প্রতিদিনই তাপ মাত্রা কমছে। তিনি জানান, শীতের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে।
রংপুর ত্রাণ কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম জানান, জেলায় ৭ হাজার ২শ' পিস শীতবস্ত্র এসেছিল তা উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। আরো ৩০ হাজার শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠিয়ে ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। একই অবস্থা উত্তরের ১৬ জেলায়। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বরাদ্দ আসায় স্থানীয় প্রশাসনকে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। রাজশাহী, লালমনিরহাট, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার ত্রাণ অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিক অবস্থায় যে ৫ থেকে ৭ হাজার শীতবস্ত্র্ত্র পাঠানো হয়েছিল তা বিতরণ করা হয়ে গেছে। প্রতিটি জেলায় আরো ২৫ থেকে ৩০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিটি জেলায় হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষের সংখা গড়ে ২ লাখের ওপর। সেই হিসাবে উত্তরের ১৬ জেলায় দরিদ্র শীতার্ত মানুষের সংখ্যা ৩০ লাখের ওপর। এসব শীতার্ত মানুষের পাশে এখন পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে এগিয়ে আসেনি। সচেতন মহলের দাবি, শীতার্ত মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো এখোনই এগিয়ে না এলে চরম দুভর্োগে পড়বে এঅঞ্চলের মানুষ।
অপরদিকে শীতের জন্য নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কর্মের অভাব দেখা দিয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষেরা ঠিকমত নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে না পেরে চরম বেকায়দায় রয়েছেন। ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্রেতা- বিক্রেতার সমাগম কমে গেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল করছে নিয়ন্ত্রিত গতিতে। দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে দিনের বেলা হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে দুর্ঘটনার আশংকা নিয়ে।
গাইবান্ধায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গত তিনদিন থেকেই গাইবান্ধা জেলার সর্বত্রই শীত অব্যাহত রয়েছে। বুধবার হঠাৎ করেই কনকনে ঠা-া বাতাস ও ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতায় জনগণ জবুথবু হয়ে পড়েছে। দিনভর সূর্যের আলো দেখা যায়নি। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে প্রকৃতি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত এবং চরাঞ্চলগুলোতে এই শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। শীতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্করা এতে কষ্ট পাচ্ছে বেশি। শীতের কবল থেকে বাঁচার জন্য শহরের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে এখন মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এই সুযোগে গাউন মার্কেট ও গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ব্যবসায়ীরা কাপড়ের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে। ফলে অর্থাভাবে দরিদ্র মানুষদের পক্ষে শীতের কাপড় সংগ্রহ করা খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘন কুয়াশার কারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসহ অন্য নদ-নদীতে নৌ চলাচল বিঘি্নত হচ্ছে। ফলে মূল ভূমির সাথে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরাঞ্চলের মানুষরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম বিপাকে পড়েছেন। শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর, মাথাব্যথাসহ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকায় সরিষা গাছের ফুল ঝরে পড়তে শুরু করেছে এবং বোরো বীজতলায় বীজধানের গাছগুলো লাল হতে শুরু করেছে।
শীতে কাবু সুন্দরগঞ্জের চরাঞ্চল
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, সুন্দরগঞ্জের আকাশে গতকাল বুধবার সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। উজান থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া, ঘন কুয়াশা, কনকনে ঠান্ডায় উপজেলার সাধারণ মানুষজন কাবু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। গত ৩ দিন ধরে হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষজনের চলাফেরা স্থবির হয়ে পড়েছে। কনকনে ঠা-ার কারণে স্কুল, কলেজগামি শিক্ষার্থী, অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাসময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারছে না। শ্রমিক, দিন মজুররা কাজ কর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। ছোটখাটসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাফেরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাট সড়ক দূর্ঘটনা। এদিকে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার চরাঞ্চলের অসহায় দুঃস্থ পরিবারগুলো কনকনে ঠান্ডার কারণে কাহিল হয়ে পড়েছে। শীত নিবারণের গরম কাপড় না থাকার কারণে অনেকে কাঁথা, চট গায়ে দিয়ে খড়-কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণ করছেন। চরাঞ্চলের আবাল-বৃদ্ধ বণিতা শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা এবং প্রসূতি মারা নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। ঠান্ডার কারণে নানাবিধ রোগ ব্যাধি দেখা দিয়েছে। অপরদিকে গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে কষ্টে রয়েছেন কৃষকরা। উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার ডাঃ জসিম মিয়া জানান, ঠান্ডার প্রকোপে নানাবিধ রোগব্যাধি দেখা দিতে পারে। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ঠান্ডা জনিত রোগব্যাধি সেরে যাবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, শীতবস্ত্রের বরাদ্দ জেলা অফিসে এসেছে। উপজেলা পৌছা মাত্রই বিতরণ করা হবে।-ডেসটিনি
No comments:
Post a Comment