নদীর পানিতে ভেসে আসা তেল মিশ্রিত পানি পান করে সুন্দরবনের করমজল
বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বিলুপ্ত প্রায় লবন পানির কুমির ছানা অসুস্থ
হয়ে পড়ছে। চার মাস বয়সী সাতটি কুমির ছানার মূখে ঘাঁ দেখা দিয়েছে। পশুর নদীর
পাশে গড়ে তোলা সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের বণ্যপ্রাণী প্রজনন
কেন্দ্রের দুটি চৌবাচ্চায় রাখা এই সাতটি কুমির ছানার মূখে ঘা বৃহষ্পতিবার
বিকেলেই প্রথম দেখতে পান এ কেন্দ্রের কর্মকর্তা। নদীতে ভেসে আসা তেল
মিশ্রিত পানি পান করার কারনেই এই কুমির ছানা আক্রান্ত হয়েছে বলে তিনি ধারনা
করছেন। নদীর পানিতে তেল ভাসতে থাকায় গত দুদিন ধরে এই চৌবাচ্চাগুলোর পানি
পরিবর্তন বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি পরিবর্তন করতে না পারার ফলে এই কুমির
ছানাগুলোকে মলমূত্রের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। এ অবস্থা যদি দীর্ঘদিন ধরে
চলতে থাকে তাহলে লবন পানির কুমির ছানা অন্যত্র সরিয়ে নিতে হতে পারে। করমজল
বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ১৮টি চৌবাচ্চায় চার মাস থেকে ছয় বছর বয়সী মোট
২৫৫টি লবন পানির কুমির রয়েছে। করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ফরেষ্ট
রেঞ্জার ও কুমির বিশেষজ্ঞ আব্দুর রব বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সুন্দরবনের পশুর
নদীতে জোয়ারের পানি এলে লবন পানির কুমিরের চৌবাচ্চাগুলোর পানি পরিবর্তন
করি। ওই জোয়ারের পানিতে যে তেল ভেসে এসেছে ওই পানি চৌবাচ্চায় তোলা হয়েছে।
ওইদিনের আর পশুর নদীর কোন পানি চৌবাচ্চায় তোলা হয়নি। বৃহষ্পতিবার বিকেলে
চৌবাচ্চার কাছে গিয়ে দেখা যায় গত আগষ্ট মাসে পিলপিল ও জুলিয়েটের নতুন জন্ম
নেয়া লবন পানির সাতটি ছানার মূখে ঘা দেখা দিয়েছে। কুমির ছানার মূখে ঘা দেখে
ইতিমধ্যে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, লবন পানির কুমিরের
চৌবাচ্চায় প্রতিদিনই পানি পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। কিন্তু নদীতে তেল ছড়িয়ে
পড়ায় আপতত চৌবাচ্চার পানি পরিবর্তন বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি পরিবর্তন করতে না
পারার ফলে এই কুমির ছানাগুলোকে মলমূত্রের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। তিনি
আরও বলেন, সুন্দরবনের শেলা ও পশুর নদীর মোট ৩১ কিলোমিটার এলাকা ডলফিনের
অভয়ারণ্য। এরমধ্যে যে স্থানে তেলের ট্যাংকার ডুবির ঘটনা ঘটেছে সেইস্থান এবং
পশুর নদীর কোল ঘেসে যে স্থানে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা
হয়েছে সেই স্থানে ডলফিনের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। বিরামহীনভাবে এখানে ডলফিন
(উঠানামা) লাফাতে থাকে। এসব স্থানে এই ডলফিন দেখতে পর্যটকরা ভিড় করে থাকেন।
কিন্তু বুধবার ও বৃহষ্পতিবার একটি ডলফিনও লাফাতে দেখা যায়নি। এসব জলজ
প্রাণী বেঁচে থাকবে না স্থান পরিবর্তন করবে তা নিয়ে তিনি শংকিত। সুন্দরবন
পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন,
বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও
লালন-পালনের জন্য সুন্দরবনস বায়োডাইভারার্সিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায়
২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট
একর জমির উপর বনবিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারী এই কুমির
প্রজনন কেন্দ্র। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়া ছোট-বড়
পাঁচটি কুমির নিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। অষ্ট্রেলিয়ার আর্ন্তজাতিক
ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সেন্টারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা আব্দুর রব
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই কেন্দ্রটি তত্ত্বাবধায়ন করে আসছেন।২০০৯ সালের ২৫ মে
আইলার জলোচ্ছ্বাসে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে ছোট-বড় ৬১টি কুমির
পানিতে ভেসে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাইরের কিছু বড় প্রাণী ১৮টি কুমিরের
বাচ্চা খেয়ে ফেলে। রোববার জন্ম নেয়া ৭২টি ছানাসহ এই কেন্দ্রে এখন কুমিরের
সংখ্যা মোট ২৫৫টি।-আমারদেশ
|
Saturday, December 13, 2014
তেলবাহী ট্যাংকার ডুবি : কুমিরের মুখে ঘা, হুমকিতে দেশের একমাত্র লবন পানির প্রজনন কেন্দ্রটি
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment