Friday, January 9, 2015

খালেদাকে অবরুদ্ধ করে রাখা বিপজ্জনক

গত শনিবার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রয়েছেন। তার বাসার সামনে এখনও পুলিশের অবস্থান রয়েছে। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা বাংলাদেশের জন্যে একটি বিপজ্জনক উদাহরণ। আওয়ামী লীগ চিরতরে ক্ষমতায় থাকবে না। শেখ হাসিনাও চিরদিন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। ভবিষ্যৎ নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হবে। কিন্তু কিছু নিদর্শন তৈরি হচ্ছে যা আমাদের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের একটি নির্মম নিদর্শন তৈরি হয়েছে। সে ঘটনার পরে স্বৈরাশাসকের হাতে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। দেশে খুন ও হত্যা হয়েছে। এগুলো সব ছিল বিপজ্জনক উদাহরণ। এরপর আমরা একপর্যায়ে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে এসেছি। সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম, আমরা সংবিধান, আইন ও শালীন সরকারের শাসন পাব। কিন্তু আমরা প্রথমেই আওয়ামী লীগের বিরতিহীন হরতালের কারণে ধাক্কা খাই ১৯৯২-৯৬-এই সময়ে। বিশেষ করে তখনকার বিএনপি সরকারের শেষ দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ তীব্র আন্দোলন শুরু করেছিল। সপ্তাহব্যাপীও দেশ অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে পার করেছে। অবশেষে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। অন্য ধাক্কা ছিল আওয়ামী লীগের নিয়মিতভাবে সংসদে উপস্থিত না থাকা। এটি ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ এর সম্ভাব্য অগ্রগতিকে হত্যা করেছিল। পরবর্তী সময়ে বিএনপি যখন বিরোধী দলে গিয়েছে তারাও তখন আওয়ামী লীগের দেখানো পথে হেঁটেছে। এসব কারণেই সঠিক গণতন্ত্রের শাসন আমরা পাইনি। সংসদও একটি কার্যকর সংসদে পরিণত হতে পারেনি। অতীতের সব ধ্বংসাত্মক নিদর্শনের মধ্যে বিএনপি একটি মারাত্মক নিদর্শন তৈরি করেছিল। সেটি হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা ও আইভি রহমানকে হত্যা করা। এটির সত্য মিথ্যা সবই ভবিষ্যতে আদালত বলে দিবে। তবে এটিও বাংলাদেশের জন্য একটি বিপজ্জনক উদাহরণ। কিন্তু খালেদা জিয়াকে কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই জোরপূর্বক আটকে রাখা ও তাকে সভা, সমাবেশ মিছিল করতে না দেয়া বাংলাদেশের জন্যে নতুন একটি দুঃখজনক নজির তৈরি হয়েছে। খালেদা জিয়াকে যেভাবে আটকে রাখা হয়েছে ১৯৯১ সালের পর থেকে সাময়িক সময়ের জন্য সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বাদ দিলে আর কোনো সময় কোনও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকে এমনভাবে আটক রাখা বা দমনের ঘটনা ঘটেনি। একটি রাষ্ট্র ও জাতি প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিশোধের নীতিতে চলতে পারে না। এভাবে প্রতিশোধ নেয়ার মনোভাব অবশ্যই বদলাতে হবে। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, আমাদের চোখের বদলে চোখের রাজনীতি আমাদের সবাইকে অন্ধ করে দেবে। অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই বলে আমি কেন বিএনপি’র অধিকার আদায়ের জন্য কথা বলি। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমি এটি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের সুপ্রতিষ্ঠিত ভবিষ্যতের জন্য করছি। লেখক: সম্পাদক, ডেইলি স্টার সূত্র: ডেইলি স্টার

No comments:

Post a Comment