রানের
জন্য ছুটছেন মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শুক্রবার মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে পঞ্চম উইকেটে এই যুগলের গড়া ১৩৪ রানের জুটিতে বিপর্যয় এড়িয়েছে বাংলাদেশ -যাযাদিঘুরে দাঁড়ানোর
সর্বাত্মক চেষ্টাই করেছে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু
বাংলাদেশ তা
হতে দিলে
তো? মাশরাফি
বিন মর্তুজার
যে অভিপ্রায়
জিম্বাবুয়েকে ধলবধোলাই করার, সেটা পূরণে
আরো একধাপ
এগিয়েও গেল
টাইগাররা। শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে
উত্তেজনাপূর্ণ চতুর্থ ওয়ানডেতে এল্টন চিগুম্বুরার
দলকে ২১
রানে হারিয়ে
ব্যবধানটা ৪-০ করে ফেলেছে
তারা। এখন
১ ডিসেম্বর
অনুষ্ঠেয় পঞ্চম
ও শেষ
ওয়ানডেটা জিতলেই
ষোলোকলা পূর্ণ।
বিশ্ব ক্রিকেট এখনো শোকাতুর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ফিল হিউজের অকাল প্রয়াণে। ম্যাচ শুরুর আগে মিরপুর শেরেবাংলায় তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে। দুই দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরাও যোগ দিয়েছেন তাতে। আর ম্যাচে পাওয়া দারুণ জয়টা স্বাগতিকরা উৎসর্গ করেছে না ফেরার দেশে পাড়ি দেয়া ওই ক্রিকেটারকেই।
আগে ব্যাটিং করেই প্রথম তিন ওয়ানডেতে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়ও। তাতে আক্ষরিক অর্থেই সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ স্বাগতিকদের জন্য কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। তাই টসে জিতে অন্য কিছু না ভেবে ব্যাটিংটাই বেছে নিয়েছেন মাশরাফি। কিন্তু বাংলাদেশের শুরুটা হলো চরম হতাশাময়। ৩২ রানের মধ্যেই চার ব্যাটসম্যান আউট হয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে করে তুলেছিলেন প্রশ্নবিদ্ধ।
তারপরও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিমের হাফসেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে স্বাগতিকরা ছুড়ে দিয়েছে ২৫৭ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল চ্যালেঞ্জটা উতরেই যাবে অতিথিরা। কিন্তু মাশরাফি-সাকিব-রুবেলদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং শেষ পর্যন্ত তা হতে দেয়নি। স্বাগতিকদের ২১ রানের জয় ভিন্ন আভাস দিলেও সিরিজে প্রথমবারের মতো কিছুটা লড়াই গড়ে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট খুইয়ে জিম্বাবুয়ে থেমেছে ২৩৫ রানে।
সিরিজে প্রথমবারের মতো ২০০ পেরোলো জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ব্রেন্ডন টেইলর আর সলোমন মিরের সৌজন্যে শতরানোর্ধ্ব জুটিও পেয়েছে প্রথম। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আর ভুসি সিবান্দা দিয়েছেন সিরিজে সেরা সূচনাও। কিন্তু এত কিছুর পরও কাক্সিক্ষত জয়টাই পেল না জিম্বাবুয়ে। তবে জয় না পেলেও লড়াই করে শেষ ওয়ানডের জন্য কিছুটা আত্মবিশ্বাস তো পাওয়া গেল; সফরকারীদের সান্ত¡না হতে পারে এটাই!
বাংলাদেশের ইনিংস ২৫৬ রানে আটকে দিয়ে জিম্বাবুয়ে ব্যাট হাতে শুরুটা করেছিল দারুণ। দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ খোয়ানোর পর সান্ত¡নার জয় পেতে কোমর বেঁধেই নেমেছিল চিগুম্বুরাবাহিনী। দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও ছিল লজ্জা ঘোচানোর চেষ্টা। মাসাকাদজা আর সিবান্দার উদ্দীপক ব্যাটিংয়ে প্রথম ১০ ওভার উইকেটশূন্যই থাকতে হয়েছে স্বাগতিক বোলারদের।
তবে সাকিব খেলবেন আর দলের জন্য অবদান রাখবেন না তা কি হয়? ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার পর তার বাঁহাতের ঘূর্ণির দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সমর্থকরা। নিরাশ করেননি দেশসেরা ক্রিকেটার। অতিথিদের উদ্বোধনী জুটিটা যখন চোখ রাঙাছে, তখনই দলকে কাক্সিক্ষত ব্রেক থ্রু দিয়েছেন তিনি। সিবান্দাকে (১৭) ফেলেছেন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। এক ওভার পর উড়িয়ে দিয়েছেন মাসাকাদজার (২৮) স্টাম্প। তাতে শ্রীলংকার গ্রেড মুত্তিয়া মুরালিধরনকে (৫৯) টপকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবচাইতে বেশি উইকেট প্রাপ্তির কৃতিত্বটি নিজের দখলে নিয়েছেন তিনি। ম্যাচে উইকেট আর পাননি। তবে শেষের দিকে সাকিবের কৃপণ বোলিংয়েই জয়টা নাগালে পেয়েছে বাংলাদেশ।
টেস্ট অভিষেকে চমক দেখানো জুবায়ের হোসেনের ওয়ানডে অভিষেকটাও হয়ে গেছে এদিন। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভারটি করতে এসে আবারো চমকই দেখিয়েছেন এই লেগস্পিনার। পঞ্চম বলেই তিনি শিকার করেছেন টিমিসেন মারুমাকে (৬)। একটু খরুচে হলেও এরপর সলোমন মিরেকে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে অভিষিক্ত এই লেগিই ভেঙে দিয়েছেন হুমকি হয়ে ওঠা চতুর্থ উইকেটের ১০৬ রানের জুটিটা।
একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, টেইলর আর মিরের এই এক জুটিই কেড়ে নেবে ৪-০র স্বপ্ন। কিন্তু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেয়া মিরে চেয়েছিলেন অভিষিক্তের ওপর চড়াও হতে। তার মূল্য দিয়েছেন ৫৪ বলে ৫২ রানে আউট হয়ে। তবে উইকেটে টেইলরের উপস্থিতি অস্বস্তি বাড়াচ্ছিল। গতিঝড়ে রুবেল হোসেন উড়িয়ে দিয়েছেন তা। ৬৯ বলে ৭টি চারে ৬৩ রান করা টেইলরের ব্যাট ছুঁয়ে বল মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়তেই পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেয়েছে স্বাগতিকরা।
এরপর বাধা হতে পারেননি চিগুম্বুরা। সফরকারী অধিনায়ক হার মেনেছেন স্বাগতিক অধিনায়কের কাছে। মাশরাফিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৪ রান করে সাজঘরের পথ ধরেছেন। এরপর স্বাগতিকদের জয়ের পথ প্রলম্বিত করে জিম্বাবুয়ের আশার প্রদীপটা জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টায় ছিলেন রেগিস চাকাভা। কিন্তু তার ২৬ রানের ইনিংস শেষতক কাজে আসেনি। সাব্বিরের থ্রুতে রান আউটে কাটা পড়েছেন পিটার মুর। পরাজয় যখন নিশ্চিত তখন এলোমেলো ব্যাট চালিয়ে ব্যবধান কমিয়েছেন চাতারা (১৫ বলে ১৬ রান)।
অথচ দিনের শুরুর চিত্রটা বাংলাদেশের জন্য ছিল চরম হতাশার। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যর্থ হলেও আগের দুই ম্যাচে দারুণ করেছেন দুই ওপেনার তামিম আর এনামুল। দুই ওয়ানডেতেই শতরানোর্ধ্ব জুটি গড়ে তারা দলকে দিয়েছিলেন শক্ত ভিত। কিন্তু চতুর্থ ওয়ানডেতে এসে সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ল। ৩১ রানের মধ্যেই সাজঘরে দ্ইু ওপেনার। নেভিল মাদজিভার বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নিলেন আগের ম্যাচের নায়ক এনামুল (৫)।
জুটিতে ইমরুল কায়েসকে খুবই পছন্দ তামিমের। দলীয় ১৪ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতনের পর তাই মুমিনুল হকের বদলে দলে ফেরা পছন্দের সঙ্গীকে নিয়ে দারুণ কিছু করে দেখানোর সুযোগ পেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু নিজেই রণে ভঙ্গ দিলেন ব্যক্তিগত ১৬ আর দলীয় ৩১ রানের মাথায়। মিরের ফুল লেন্থের বলটি উঠিয়ে মারলেন পয়েন্ট দিয়ে। কিন্তু ডিপ পয়েন্টে বলটি দক্ষতার সঙ্গে তালুবন্দি করে মাশরাফি ব্রিগেডকে দ্বিতীয় ধাক্কাটা দিলেন মাসাকাদজা।
পরের ওভারের প্রথম বলেই আউট ইরুমল। মাদজিভার লেগ স্টাম্পের ওপর থাকা বলটি ফ্লিক করেছিলেন এই বাঁহাতি। কিন্তু মাটিতে রাখতে পারেননি বল। শর্ট মিড উইকেটে অসাধারণভাবে বলটি তালুবন্দি করেছেন টেইলর। ৫ রানে আউট হওয়ায় ফেরাটা তাই পানসে হয়ে থাকল ইমরুলের। এরপর সাকিব আল হাসান ফিরলেন কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই। মিরের স্লোয়ারে ড্রাইভ খেলেছিলেন কাভারে। কিন্তু টাইমিং করতে পারেননি। মাটিতেও রাখতে পারেননি বল। কাভারে দাঁড়িয়েই সহজ ক্যাচটা ধরলেন মারুমা। তাতে ১ উইকেটে ৩১ থেকে মুহূর্তেই বাংলাদেশর স্কোর ৩২/৪। দলের খাতায় একটি রান যোগ হতেই নেই ৩ উইকেট।
প্রথমবারের মতো সিরিজে দেখা গেল জিম্বাবুয়ের রাজত্ব। সব খুইয়ে নিজেদের খুঁজে ফেরা দলটি তখন বেশ উজ্জীবিত। টাইগারদের বাগে পেয়ে অতিথিরা তখন বেশ আক্রমণাত্মক। ঠিক তখনই মুশফিকের প্রতিঘাত। সিনিয়র পার্টনার মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে চলমান সিরিজের আগেই ওয়ানডের নেতৃত্ব হারানো এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ধীরে ধীরে কেড়ে নিতে থাকলেন অতিথিদের আনন্দ। পঞ্চম উইকেটে তাদের ১৩৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশ ফিরে পেল পথের দিশা।
যেমনটি স্বাগতিকরা পেয়েছিল চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডেতেও। সেদিন সাকিবের সঙ্গে এই পঞ্চম উইকেটেই রেকর্ড ১৫৮ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিক। এদিন ১৩৪ রানের জুটি গড়লেন মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে। পঞ্চম উইকেটে যেটি হয়ে থাকল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মিরপুর শেরেবাংলায় সর্বোচ্চ। তবে আগের জুটিটাকে এদিন ছাড়িয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল তাদের সামনে। কিন্তু দারুণ ব্যাটিং করে চলা মুশফিক অতি আত্মবিশ্বাসে কামুঙ্গোজিকে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে নিজের প্রাণ সঁপলেন চিগুম্বুরার হাতে। ইতি ঘটল অসাধারণ এক জুটির। মুশফিক ইতি ঘটালেন নিজের ৭৭ অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংসটির। ৭৮ বলে যে ইনিংসটি গড়েছিলেন তিনি। হাঁকিয়েছিলেন অসাধারণ ৭টি বাউন্ডারি।
দলীয় ১৬৬ রানে মুশফিকের বিদায়ের পর আবারো ছন্দপতন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। দ্রুত বিদায় নিলেন সাব্বির রহমান রুম্মান (৪) এবং চোট কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা আবুল হাসান রাজু (১)। দুজনেই উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন প্রতিপক্ষ বোলারকে। যে কারণে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেটা কাজে লাগল না। স্বাগতিকরা তুলতে পারল মাত্র ২১ রান। ৪১ ওভার পার না হতেই নেই ৭ উইকেট। রান ১৭৭। দলীয় সংগ্রহ ২০০ রানের গ-ি পেরোনো নিয়েই দেখা দিয়েছিল সংশয়। আর নির্ধারিত ৫০ ওভার ব্যাটিং করা তো তখন অনেক দূরের পথ।
দলপতি মাশরাফিকে নিয়ে অবশ্য তা কাছেই টেনে নিলেন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় সংগ্রহ ২০০ পেরোলো তাদের ৬৫ রানের জুটিতে। যে জুটিটা হয়ে থাকল স্বাগিতকদের ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেটাও এল দ্রুত গতিতে, ৪৮ বলে। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাশরাফি ছুটির দিনে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকদের জোগালেন আনন্দের খোরাক। ৩টি চার আর ২টি ছক্কায় ২৫ বলে খেলেছেন ৩৯ রানের দারুণ কার্যকর এক ইনিংস।
মাহমুদউল্লাহ যথাসম্ভব টেনে নিয়ে গেলেন নিজের ইনিংসটাকে। ছাড়িয়ে গেলেন আগের ক্যারিয়ারসেরা ৭৫ রানকে। অপরাজিত থাকলেন ৮২ রানে। ওই ইনিংসেই দেশের ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে এদিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২ হাজার রানেরও মাইলফলক ছুঁয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। জিতেছেন ম্যাচসেরার খেতাবও। ১১২ বলে ৬টি চারে সাজানো তার ইনিংসটি সমৃদ্ধ করেছে দলের পুঁজি। যে পুঁজিই এনে দিয়েছে দারুণ এক জয়, আর সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাইয়ের উপলক্ষ। -
বিশ্ব ক্রিকেট এখনো শোকাতুর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ফিল হিউজের অকাল প্রয়াণে। ম্যাচ শুরুর আগে মিরপুর শেরেবাংলায় তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে। দুই দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরাও যোগ দিয়েছেন তাতে। আর ম্যাচে পাওয়া দারুণ জয়টা স্বাগতিকরা উৎসর্গ করেছে না ফেরার দেশে পাড়ি দেয়া ওই ক্রিকেটারকেই।
আগে ব্যাটিং করেই প্রথম তিন ওয়ানডেতে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়ও। তাতে আক্ষরিক অর্থেই সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ স্বাগতিকদের জন্য কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। তাই টসে জিতে অন্য কিছু না ভেবে ব্যাটিংটাই বেছে নিয়েছেন মাশরাফি। কিন্তু বাংলাদেশের শুরুটা হলো চরম হতাশাময়। ৩২ রানের মধ্যেই চার ব্যাটসম্যান আউট হয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে করে তুলেছিলেন প্রশ্নবিদ্ধ।
তারপরও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিমের হাফসেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে স্বাগতিকরা ছুড়ে দিয়েছে ২৫৭ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল চ্যালেঞ্জটা উতরেই যাবে অতিথিরা। কিন্তু মাশরাফি-সাকিব-রুবেলদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং শেষ পর্যন্ত তা হতে দেয়নি। স্বাগতিকদের ২১ রানের জয় ভিন্ন আভাস দিলেও সিরিজে প্রথমবারের মতো কিছুটা লড়াই গড়ে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট খুইয়ে জিম্বাবুয়ে থেমেছে ২৩৫ রানে।
সিরিজে প্রথমবারের মতো ২০০ পেরোলো জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ব্রেন্ডন টেইলর আর সলোমন মিরের সৌজন্যে শতরানোর্ধ্ব জুটিও পেয়েছে প্রথম। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আর ভুসি সিবান্দা দিয়েছেন সিরিজে সেরা সূচনাও। কিন্তু এত কিছুর পরও কাক্সিক্ষত জয়টাই পেল না জিম্বাবুয়ে। তবে জয় না পেলেও লড়াই করে শেষ ওয়ানডের জন্য কিছুটা আত্মবিশ্বাস তো পাওয়া গেল; সফরকারীদের সান্ত¡না হতে পারে এটাই!
বাংলাদেশের ইনিংস ২৫৬ রানে আটকে দিয়ে জিম্বাবুয়ে ব্যাট হাতে শুরুটা করেছিল দারুণ। দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ খোয়ানোর পর সান্ত¡নার জয় পেতে কোমর বেঁধেই নেমেছিল চিগুম্বুরাবাহিনী। দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও ছিল লজ্জা ঘোচানোর চেষ্টা। মাসাকাদজা আর সিবান্দার উদ্দীপক ব্যাটিংয়ে প্রথম ১০ ওভার উইকেটশূন্যই থাকতে হয়েছে স্বাগতিক বোলারদের।
তবে সাকিব খেলবেন আর দলের জন্য অবদান রাখবেন না তা কি হয়? ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার পর তার বাঁহাতের ঘূর্ণির দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সমর্থকরা। নিরাশ করেননি দেশসেরা ক্রিকেটার। অতিথিদের উদ্বোধনী জুটিটা যখন চোখ রাঙাছে, তখনই দলকে কাক্সিক্ষত ব্রেক থ্রু দিয়েছেন তিনি। সিবান্দাকে (১৭) ফেলেছেন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। এক ওভার পর উড়িয়ে দিয়েছেন মাসাকাদজার (২৮) স্টাম্প। তাতে শ্রীলংকার গ্রেড মুত্তিয়া মুরালিধরনকে (৫৯) টপকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবচাইতে বেশি উইকেট প্রাপ্তির কৃতিত্বটি নিজের দখলে নিয়েছেন তিনি। ম্যাচে উইকেট আর পাননি। তবে শেষের দিকে সাকিবের কৃপণ বোলিংয়েই জয়টা নাগালে পেয়েছে বাংলাদেশ।
টেস্ট অভিষেকে চমক দেখানো জুবায়ের হোসেনের ওয়ানডে অভিষেকটাও হয়ে গেছে এদিন। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভারটি করতে এসে আবারো চমকই দেখিয়েছেন এই লেগস্পিনার। পঞ্চম বলেই তিনি শিকার করেছেন টিমিসেন মারুমাকে (৬)। একটু খরুচে হলেও এরপর সলোমন মিরেকে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে অভিষিক্ত এই লেগিই ভেঙে দিয়েছেন হুমকি হয়ে ওঠা চতুর্থ উইকেটের ১০৬ রানের জুটিটা।
একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, টেইলর আর মিরের এই এক জুটিই কেড়ে নেবে ৪-০র স্বপ্ন। কিন্তু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেয়া মিরে চেয়েছিলেন অভিষিক্তের ওপর চড়াও হতে। তার মূল্য দিয়েছেন ৫৪ বলে ৫২ রানে আউট হয়ে। তবে উইকেটে টেইলরের উপস্থিতি অস্বস্তি বাড়াচ্ছিল। গতিঝড়ে রুবেল হোসেন উড়িয়ে দিয়েছেন তা। ৬৯ বলে ৭টি চারে ৬৩ রান করা টেইলরের ব্যাট ছুঁয়ে বল মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়তেই পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেয়েছে স্বাগতিকরা।
এরপর বাধা হতে পারেননি চিগুম্বুরা। সফরকারী অধিনায়ক হার মেনেছেন স্বাগতিক অধিনায়কের কাছে। মাশরাফিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৪ রান করে সাজঘরের পথ ধরেছেন। এরপর স্বাগতিকদের জয়ের পথ প্রলম্বিত করে জিম্বাবুয়ের আশার প্রদীপটা জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টায় ছিলেন রেগিস চাকাভা। কিন্তু তার ২৬ রানের ইনিংস শেষতক কাজে আসেনি। সাব্বিরের থ্রুতে রান আউটে কাটা পড়েছেন পিটার মুর। পরাজয় যখন নিশ্চিত তখন এলোমেলো ব্যাট চালিয়ে ব্যবধান কমিয়েছেন চাতারা (১৫ বলে ১৬ রান)।
অথচ দিনের শুরুর চিত্রটা বাংলাদেশের জন্য ছিল চরম হতাশার। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যর্থ হলেও আগের দুই ম্যাচে দারুণ করেছেন দুই ওপেনার তামিম আর এনামুল। দুই ওয়ানডেতেই শতরানোর্ধ্ব জুটি গড়ে তারা দলকে দিয়েছিলেন শক্ত ভিত। কিন্তু চতুর্থ ওয়ানডেতে এসে সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ল। ৩১ রানের মধ্যেই সাজঘরে দ্ইু ওপেনার। নেভিল মাদজিভার বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নিলেন আগের ম্যাচের নায়ক এনামুল (৫)।
জুটিতে ইমরুল কায়েসকে খুবই পছন্দ তামিমের। দলীয় ১৪ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতনের পর তাই মুমিনুল হকের বদলে দলে ফেরা পছন্দের সঙ্গীকে নিয়ে দারুণ কিছু করে দেখানোর সুযোগ পেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু নিজেই রণে ভঙ্গ দিলেন ব্যক্তিগত ১৬ আর দলীয় ৩১ রানের মাথায়। মিরের ফুল লেন্থের বলটি উঠিয়ে মারলেন পয়েন্ট দিয়ে। কিন্তু ডিপ পয়েন্টে বলটি দক্ষতার সঙ্গে তালুবন্দি করে মাশরাফি ব্রিগেডকে দ্বিতীয় ধাক্কাটা দিলেন মাসাকাদজা।
পরের ওভারের প্রথম বলেই আউট ইরুমল। মাদজিভার লেগ স্টাম্পের ওপর থাকা বলটি ফ্লিক করেছিলেন এই বাঁহাতি। কিন্তু মাটিতে রাখতে পারেননি বল। শর্ট মিড উইকেটে অসাধারণভাবে বলটি তালুবন্দি করেছেন টেইলর। ৫ রানে আউট হওয়ায় ফেরাটা তাই পানসে হয়ে থাকল ইমরুলের। এরপর সাকিব আল হাসান ফিরলেন কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই। মিরের স্লোয়ারে ড্রাইভ খেলেছিলেন কাভারে। কিন্তু টাইমিং করতে পারেননি। মাটিতেও রাখতে পারেননি বল। কাভারে দাঁড়িয়েই সহজ ক্যাচটা ধরলেন মারুমা। তাতে ১ উইকেটে ৩১ থেকে মুহূর্তেই বাংলাদেশর স্কোর ৩২/৪। দলের খাতায় একটি রান যোগ হতেই নেই ৩ উইকেট।
প্রথমবারের মতো সিরিজে দেখা গেল জিম্বাবুয়ের রাজত্ব। সব খুইয়ে নিজেদের খুঁজে ফেরা দলটি তখন বেশ উজ্জীবিত। টাইগারদের বাগে পেয়ে অতিথিরা তখন বেশ আক্রমণাত্মক। ঠিক তখনই মুশফিকের প্রতিঘাত। সিনিয়র পার্টনার মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে চলমান সিরিজের আগেই ওয়ানডের নেতৃত্ব হারানো এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ধীরে ধীরে কেড়ে নিতে থাকলেন অতিথিদের আনন্দ। পঞ্চম উইকেটে তাদের ১৩৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশ ফিরে পেল পথের দিশা।
যেমনটি স্বাগতিকরা পেয়েছিল চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডেতেও। সেদিন সাকিবের সঙ্গে এই পঞ্চম উইকেটেই রেকর্ড ১৫৮ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিক। এদিন ১৩৪ রানের জুটি গড়লেন মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে। পঞ্চম উইকেটে যেটি হয়ে থাকল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মিরপুর শেরেবাংলায় সর্বোচ্চ। তবে আগের জুটিটাকে এদিন ছাড়িয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল তাদের সামনে। কিন্তু দারুণ ব্যাটিং করে চলা মুশফিক অতি আত্মবিশ্বাসে কামুঙ্গোজিকে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে নিজের প্রাণ সঁপলেন চিগুম্বুরার হাতে। ইতি ঘটল অসাধারণ এক জুটির। মুশফিক ইতি ঘটালেন নিজের ৭৭ অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংসটির। ৭৮ বলে যে ইনিংসটি গড়েছিলেন তিনি। হাঁকিয়েছিলেন অসাধারণ ৭টি বাউন্ডারি।
দলীয় ১৬৬ রানে মুশফিকের বিদায়ের পর আবারো ছন্দপতন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। দ্রুত বিদায় নিলেন সাব্বির রহমান রুম্মান (৪) এবং চোট কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা আবুল হাসান রাজু (১)। দুজনেই উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন প্রতিপক্ষ বোলারকে। যে কারণে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেটা কাজে লাগল না। স্বাগতিকরা তুলতে পারল মাত্র ২১ রান। ৪১ ওভার পার না হতেই নেই ৭ উইকেট। রান ১৭৭। দলীয় সংগ্রহ ২০০ রানের গ-ি পেরোনো নিয়েই দেখা দিয়েছিল সংশয়। আর নির্ধারিত ৫০ ওভার ব্যাটিং করা তো তখন অনেক দূরের পথ।
দলপতি মাশরাফিকে নিয়ে অবশ্য তা কাছেই টেনে নিলেন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় সংগ্রহ ২০০ পেরোলো তাদের ৬৫ রানের জুটিতে। যে জুটিটা হয়ে থাকল স্বাগিতকদের ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেটাও এল দ্রুত গতিতে, ৪৮ বলে। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাশরাফি ছুটির দিনে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকদের জোগালেন আনন্দের খোরাক। ৩টি চার আর ২টি ছক্কায় ২৫ বলে খেলেছেন ৩৯ রানের দারুণ কার্যকর এক ইনিংস।
মাহমুদউল্লাহ যথাসম্ভব টেনে নিয়ে গেলেন নিজের ইনিংসটাকে। ছাড়িয়ে গেলেন আগের ক্যারিয়ারসেরা ৭৫ রানকে। অপরাজিত থাকলেন ৮২ রানে। ওই ইনিংসেই দেশের ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে এদিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২ হাজার রানেরও মাইলফলক ছুঁয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। জিতেছেন ম্যাচসেরার খেতাবও। ১১২ বলে ৬টি চারে সাজানো তার ইনিংসটি সমৃদ্ধ করেছে দলের পুঁজি। যে পুঁজিই এনে দিয়েছে দারুণ এক জয়, আর সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাইয়ের উপলক্ষ। -
যায়যায় দিন
No comments:
Post a Comment