ধর্ষক ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা
চোর বা ডাকাত আতঙ্ক নয়। এবার রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন নারী ধর্ষণ ঠেকাতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের বয়লার পাড়ার মানুষরা ধর্ষক আতঙ্কে দিন যাপন করছেন। প্রতিরাতে ধর্ষকরা বয়লার পাড়ায় হানা দিয়ে কাউকে না কাউকে তুলে নিচ্ছে। গণধর্ষণ শেষে ছেড়ে দিচ্ছে তাদের। অব্যাহত এ ধর্ষণ আতঙ্কে বয়লার পাড়ার বাসিন্দারা তাদের কলোনি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
প্রতি রাতেই সেখানে হানা দেয় ধর্ষক গ্রুপ। এ অবস্থায় সম্ভ্রম বাঁচাতে আশুগঞ্জ মধ্য সোনারমপুর এলাকার কয়েকটি বয়লারের কয়েকশ' নারী শ্রমিক বাড়িতে চলে গেছেন। তাদের সঙ্গে স্বামী-সন্তান সবাই। এ অবস্থায় কর্মব্যস্ত চারটি বয়লার এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বয়লার মালিকদের মাথায় হাত। অথচ বয়লার পাড়া থেকে মাত্র কয়েকশ' গজ দূরে আশুগঞ্জ থানা। এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ধর্ষকরা এতটাই বেপরোয়া, স্বামীর সামনেই এক নারী শ্রমিককে ধর্ষণ করা হয়। এর আগে বয়লার থেকে স্বামীসহ তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার পর বয়লার শ্রমিকরা আর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সেখানে থাকার সাহস দেখাননি। একটি বয়লার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জসিম সরদার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দেখেন বয়লারগুলোর অবস্থা কি ! থানা থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরত্বে আমরা বয়লার চালাইতে পারি না ! কোন দেশে বাস করি আমরা ?
সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত ১১ নভেম্বর রাতে মধ্য সোনারামপুর এলাকার ফাহিম-১ নামের একটি বয়লারের এক নারী শ্রমিককে তার ঘর থেকে স্বামীসহ তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এরপর ওই বয়লারটির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ফিসারির পাড়ে নিয়ে গিয়ে স্বামীর সামনেই তাকে ধর্ষণ করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর আবার তাকে ফেলে রেখে যায়। খবির নামের কিশোরগঞ্জ নিকলীর এক শ্রমিক জানান, ওই নারী শ্রমিকের বয়স ২০ বছর হবে।
ধর্ষণের পর ওই নারী শ্রমিকের স্বামীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এরপর ওই নারী শ্রমিক তার স্বামী কারো কাছে বলবে না বলে আকুতি জানিয়ে তাকে রক্ষা করেন।
এদিকে, ওই নারী শ্রমিককে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বয়লার শ্রমিকরা এবং আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা সেখানে গিয়ে এক দুর্বৃত্তকে ধরে ফেলে। গণপিটুনিতে গুরুতর আহত ওই দুর্বৃত্তকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানোর পর রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর আতঙ্ক নেমে আসে ফাহিম-১সহ আশপাশের আরো কয়েকটি বয়লারে। পরদিন থেকে শ্রমিকরা বয়লার ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে শুরু করে। ফাহিম-১, ফাহিম-২ এবং সানমুন-১, সানমুন-২ ই চারটি বয়লার পাশাপাশি। এখনো এ চারটি বয়লারের যে সব শ্রমিক রয়ে গেছেন, তারা আশ্রয় নিয়েছেন পশ্চিমের দারোগা আলীর বয়লারে।
এসব বয়লারে গিয়ে উল্লেখ করার মতো কোন শ্রমিক দেখা যায়নি। চারটি বয়লারে গোটা ১৫-২০ জন শ্রমিকের দেখা মেলে। তাদের চোখেমুখেও চরম আতঙ্কের ছাপ। ধর্ষণের ঘটনা নিয়েও মুখ খুলতে চান না কেউ।
বৃদ্ধ হাসান আলী আর তার স্ত্রী আছিয়া বলেন, রাতে চিৎকার হুইন্না ঘুম ভাঙে আমাদের। কিন্তু দরজা খুইল্লা বাইরে যাওয়ার সাহস পাই নাই। শুনছি ঘর থেকে টাইন্না জামাই-বউরে লইয়া গেছে। এরপর জামাইর সামনে বউএর ইজ্জত নষ্ট করছে।'
এ ঘটনার পর তারা আশ্রয় নিয়েছেন পাশে দারোগা আলীর বয়লারে। দুই নারী শ্রমিক হবিগঞ্জের লাখাইয়ের রাশিদা ও ফুলবানু আতঙ্কের মধ্যে আছেন বলে জানান।
বয়লারটি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের এই চারটি বয়লারে প্রায় ১০০০ শ্রমিক কাজ করে। এর অর্ধেকই নারী। ঘটনার পর তারা কেউ আর এখন বয়লারে নেই।
আশুগঞ্জ বয়লার মালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ডাকাতরা মেয়েছেলেরে ধইরা নিয়ে গিয়েছিল বলে শুনেছি। আমি এলাকায় ছিলাম না। পরে এসে ঘটনাটি জানতে পারি। ওই এলাকায় ডাকাতের উপদ্রব বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে আশুগঞ্জ থানার ওসি মো. আবু জাফর নারী শ্রমিক ধর্ষণের অভিযোগ পাননি বলে জানান। তিনি ঘটনার বিষয়ে বলেন, ডাকাতরা বয়লারের ওপর দিয়ে ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় লোকজন ঘেরাও করে গণপিটুনি দিলে এক ডাকাত মারা যায়। তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে একটি মামলা হয়েছে। নারী শ্রমিক ধর্ষণের কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
রাজনীতি করলে বেহেশতে যাওয়া যায় : পরিকল্পনামন্ত্রী
ReplyDeleteরাজনীতি করলে বেহেশতে যাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা ও অবকাঠামো চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। সুশীল সমাজের সমালোচনা করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, 'সবার রাজনীতি করা উচিত। রাজনীতি করলে ভাল কাজ করা হবে। শুধু মাইকের নিচে কথা বললে হবে না। আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। রাজনীতি করলে বেহেশতে যাওয়া যায়।'
অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এন মান্নান বলেন, 'উন্নয়নে সবচেয়ে বড় দরকার স্থিতিশীলতা। স্থিতিশীলতার উন্নয়নে যা কিছু প্রয়োজন সব কিছু পরিবর্তন করতে হবে। সুশীল সমাজ শুধু শহরে ঘোরাফেরা করে। তারা গ্রামে যায় না। গ্রামে কি ঘটে তা তারা জানে না। কিন্তু আমরা গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমরা গ্রামে গিয়ে মানুষের কথা তুলে আনি।' অনুষ্ঠানে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, 'খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয়টি একটি রাজনৈতিক বক্তব্য। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় বৃদ্ধির হারের তুলনায় খাদ্য উৎপাদনের হার বাড়েনি। চাল দিয়ে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দাবি করি। চালের সঙ্গে আরও অনেক পণ্য আছে যেগুলো খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।'