এজাজুল
হক মুকুল ও আবদুল জলিল ভূইয়া কুমিল্লা থেকে
টাউনহল ময়দানে শনিবার ২০-দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া -যাযাদিবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ক্ষমতা ছাড়লে জনগণ আওয়ামী লীগকে পিষে ফেলবে। সেজন্য তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তবে এ সরকার চিরস্থায়ী নয়। শিগগিরই তাদের পতন হবে। এবার গুলি করে 'গদি রক্ষা' হবে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগকে বর্জন করি। কারণ দেশে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে।
শনিবার কুমিল্লার টাউন হল ময়দানে ২০-দলীয় জোট আলোচিত বিশাল জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। চলছে এক ব্যক্তির শাসন ও শোষণ। হাসিনা এখন খুনিদের দ্বারা বেষ্টিত। সরকার বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে দাড়ি-টুপি পরিহিত লোকদের জঙ্গি সাজিয়ে নাটক করছে।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে
সরকারের দুর্নীতি-অপশাসন, বিরোধী দল দমন, আগামী আন্দোলন, সরকারের বিদেশ স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা, মিথ্যা মামলা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিনিয়োগের মন্দাভাব, প্রশাসন, বিচার বিভাগ দলীয়করণসহ আগামীতে ক্ষমতায় গেলে করণীয় বিষয় তুলে ধরেন।
সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকে নেতাকর্মীরা মাঠে উপস্থিত হতে থাকেন। কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, বরুড়া, দাউদকান্দি, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, মেঘনা, তিতাস, দেবীদ্বার, হোমনা, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর, নাঙ্গলকোট- এই ১৬টি উপজেলা থেকে আসা হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে জনসভাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জেলার পাঁচটি স্থানে বড় পর্দার টিভি বসানো হয় যাতে মানুষ খালেদা জিয়ার ভাষণ শুনতে পায়। কুমিল্লা ছাড়াও চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা এতে যোগ দেন। তাদের অনেকের হাতে ধানের শীষ প্রতীক, শহীদ জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি, পোস্টার ও ফেস্টুন ছিল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিলে ব্যান্ডসঙ্গীত দলের উপস্থিতি দেখা গেছে। জনসভা উপলক্ষে দুই শতাধিক মাইক লাগানো হয়। শহরজুড়ে নির্মাণ করা হয় কয়েকশ স্বাগত তোরণ। মঞ্চসহ চারপাশে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সকালের দিকে মঞ্চের সামনে অবস্থান নেয় জামায়াত শিবিরকর্মীরা। পুরো মাঠেও তাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। মানবতাবিরোধী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতাদের মুক্তি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন ছিল তাদের হাতে।
ঢাকা থেকে কুমিল্লা আসার পথে দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, গৌরিপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় সড়কের পাশে ৩০/৪০টি স্বাগত তোরণ ভাংচুর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। খালেদা জিয়া ও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছবি সংবলিত ডিজিটাল ব্যানারসহ পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলে। রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায় এগুলো। মানুষের জনসমুদ্রের মধ্যে টাউন হলের মাঠের আকাশে বড় বড় বেলুন ?ওড়ানো হয়েছে।
দক্ষিণ জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সালাউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকতউল্লা বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুল হক চৌধুরী, যুব দল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এহছানুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহিলা দল সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, স্থানীয় বিএনপি জেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আমিন-উর রশীদ ইয়াছিন, উত্তরের সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা নেতা মোস্তাক মিয়া, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম, জাকারিয়া তাহের সুমন, আবুল কালাম আজাদ, আবদুল গফুর ভঁূইয়া, ড. মোশাররফ হোসেনের ছেলে ড. খন্দাকার মারুফ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জোট নেতাদের মধ্য এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিশের মওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, শাহিদুর রহমান তামান্না, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, ইসলামিক পাটির আবদুল মোবিন, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের গরিবে নেওয়াজ, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ন্যাপ গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, জমিয়তে উলামা ইসলামের মওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, জেলার মহানগর জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, দক্ষিণ জেলা আমীর আবদুস সাত্তার, উত্তর জেলা আমীর মওলানা আবদুল আউয়াল, সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, জাপা নেতা এয়ার আহমেদ সেলিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জনসভা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন কিছুক্ষণ সার্কিট হাউসে অবস্থান করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্য উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'এইচ টি ইমাম, হাসিনাদের ইমাম। তিনি সব জারিজুরি ফাঁস করে দিয়েছেন। কীভাবে ভোটকেন্দ্রে লোক নিয়োগ করা হয়েছে, কীভাবে ব্যালট বাক্স ভরেছে, সব ফাঁস করে দিয়েছেন।'
এইচ টি ইমামের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, 'পাকিস্তান আমলে দুর্নীতির কারণে তার চাকরি গিয়েছিল। তিনি মুশতাক সরকারের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন। হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে এই ইমামই সব কুবুদ্ধি দিয়ে থাকেন। এই ইমামকে নিয়ে ইমামতি করলে সেটা হালাল হবে না। এই ইমামের পেছনে না থাকলেই তাদের ভালো হবে। এইচ টি ইমাম এত বড় সত্য কথা বলার পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়।'
আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, অস্ত্র-বস্ত্র- দুঃখ মোচনের জন্য আন্দোলন।
নিজের ক্ষমতায় না যাওয়ার আগ্রহের কথা প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'আপনারা আমাকে তিনবার প্রধান মন্ত্রী করেছেন। আমরা কাছে ক্ষমতা বড় কিছু নয়। আমি চাই, দেশের মানুষ ভালো থাকুক, দেশে শান্তি ফিরে আসুক।' তিনি বলেন, আমি জানি কুমিল্লার মানুষ আন্দোলনে এগিয়ে। যখনই আমি আন্দোলনের ডাক দেব, তখনই আপনারা সাড়া দেবেন। এবার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
তিনি বলেন, 'আমাদের আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। ভালো কিছু পেতে হলে কিছু কষ্ট করতে হয়। আন্দোলনে আমি আপনাদের সঙ্গে সামনে থাকব। এককাতারে চলি। দেখি কীভাবে পুলিশ গুলি করে। এবার গুলি করে গদি রক্ষা হবে না। যখনই ডাক দেয়া হবে, তখনই সবাইকে আন্দোলনে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ১/১১ সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে ৮ হাজার মামলা একে একে সরকার তুলে নিয়েছে। হাসিনার নামে ১৫টি মামলা ছিল। তাও তুলে নেয়া হয়েছে। হাসিনার নামে ওইসব মামলার মধ্যে জোড়াতালি দেয়া মিগ-২৯ জালিয়াতি মামলা ও পুরনো ফিগ্রেড ক্রয়ের মামলা রয়েছে। ওইসব মামলার বিচার হলে হাসিনার সাজা হতো।
তিনি বলেন, 'আমি হাসিনার কাছে জানতে চাই, ওই সব মামলা কেন উঠিয়ে নিলেন। আপনি নিরপেক্ষ আদালতের মাধ্যমে ফেস করতেন, দেখতাম, কত সাহস। সেজন্যই তো মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের পায়ে ধরেছিলেন। তারা আমার কাছেও এসেছিল, আমি তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।'
খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি-অপশানের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এরা দেশের অর্থনীতিকে স্থবির করে ফেলেছে। যদু-মধুদের নিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদ গঠন করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। এ সময় কয়েকটি পত্রিকার রিপোর্টের উদ্ধৃৃতি দিয়ে বলেন, দেশে বিনিয়োগে বাধা, ব্যাংকের চড়া সুদ, শিল্পকারখানা তৈরি হচ্ছে না। কোনো উন্নয়ন নেই।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ বর্জন করুন। নতুন করে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। এই পরিবর্তন হবে যুব-যুবতীদের কর্মসংস্থান, দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের।'
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের আবারো বিলুপ্ত দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, র্যাব এখন মানুষ খুনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিদেশিদের বলব, যারা আপনাদের দেয়া গুলি-টিয়ারগ্যাস-রাবার বুলেট নিরীহ জনগণের ওপর ব্যবহার করে, তা র্যাব-পুলিশকে দেয়া বন্ধ করুন। তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ ও জাতিসংঘ মিশনে না নেয়ারও আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে র্যাবের উপ-মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকে গুম-খুনের নেপথ্য ব্যক্তি অভিহিত করে অবিলম্বে তার চাকরিচ্যুত ও গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকা-ের সমালোচনা করে তারা 'কন্টাক কিলিং' করছে বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, টাকা দিলে ছেড়ে দেয়, না দিলে খুন হয়। রাস্তাঘাটে, খালে-বিলে কেন এত লাশ পাওয়া যাচ্ছে?
বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি হচ্ছে দুর্নীতি। যত পারো লুটেপুটে খাও। সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেল। তখনই এক ব্যক্তির কাছ ওহি নাজিল হলো। দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতিবাজদের বিচার না করে দায়মুক্তি দিল। এই কমিশন এখন দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে দায়মুক্তি কমিশনে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে লুটপাট চলছে। সেখানেও এভাবে ওহি নাজিল হলে তারা লুটপাটকারীরা বেঁচে যায়। দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে।
খালেদা জিয়া দশম সংসদকে অবৈধ অভিহিত করে বলেন, এরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কেমন হয়েছে। শফিউল আলম প্রধান বলেছেন তা। তার ভাষায় এটি কুত্তা মার্কা নির্বাচন হয়েছে। এ রকম একটি সংসদে কোনো আইন পাসের অধিকার নেই। জোর করে আইন পাস করলে তা টিকবে না। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিসংশন আইনের কঠের সমালোচনা করেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন বিদেশিদের আকৃষ্ট করতেই সরকার জঙ্গি সাজিয়ে নাটক করছে। দাড়ি-টুপি দেখলে তাদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে নাজেহাল করছে। কিন্তু ওইসব দাড়ি-টুপিওয়ালা মানুষ ধর্মের কথা বলে, ইসলাম-ইমানের কথা প্রচার করে। তারা কোনোভাবে জঙ্গি নয়।
যুবলীগ নেতা মির্জা আজমের ভগি্নপতি শীর্ষ জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমানের গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আমলে র্যাবের কর্নেল গুলজারের নেতৃত্বে শায়খ আবদুর রহমান গ্রেপ্তার হয়েছিল বলেই গুলজারকে বিডিআরের পোস্টিং দিয়ে হত্যা করা হয়েছি। এভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মাথায় পিলখানায় ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা জানত বলেই সুধাসদন থেকে কিছুদিন আগে হেয়ার রোডের বাসায় ওঠেন হাসিনা।
খালেদা জিয়া বলেন, খুনিরা এক হয়েছে। খুনের রাজত্ব চলছে। এরশাদ এই সরকারের সঙ্গে। ডা. মিলনকে হত্যা করেছে। নূর হোসেন, জয়নাল, দিপালী সাহা কাদের গুলিতে জীবন দিয়েছে। হাসিনা আজ সব খুনি নিয়ে বসবাস করছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়ার প্রথম কর্মস্থলের স্মৃতিচারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, কুমিল্লায় এসে আমার ভালো লাগছে। কেন জানেন। স্বাধীনতার পর এখানে আমার স্বামীর প্রথম পোস্টিং হয়েছিল। এজন্য কুমিল্লার মানুষের সঙ্গে আমার এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যখনই আমি কুমিল্লা আসি, মনটা আমার ভরে যায়। আমাকে যে সম্মান আপনারা দিয়েছেন, সেজন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মুক্তি এবং ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মো. মোফাজ্জল হোসেইন কায়কোবাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান খালেদা জিয়া। -যায় যায় দিন
শনিবার কুমিল্লার টাউন হল ময়দানে ২০-দলীয় জোট আলোচিত বিশাল জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। চলছে এক ব্যক্তির শাসন ও শোষণ। হাসিনা এখন খুনিদের দ্বারা বেষ্টিত। সরকার বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে দাড়ি-টুপি পরিহিত লোকদের জঙ্গি সাজিয়ে নাটক করছে।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে
সরকারের দুর্নীতি-অপশাসন, বিরোধী দল দমন, আগামী আন্দোলন, সরকারের বিদেশ স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা, মিথ্যা মামলা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিনিয়োগের মন্দাভাব, প্রশাসন, বিচার বিভাগ দলীয়করণসহ আগামীতে ক্ষমতায় গেলে করণীয় বিষয় তুলে ধরেন।
সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকে নেতাকর্মীরা মাঠে উপস্থিত হতে থাকেন। কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, বরুড়া, দাউদকান্দি, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, মেঘনা, তিতাস, দেবীদ্বার, হোমনা, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর, নাঙ্গলকোট- এই ১৬টি উপজেলা থেকে আসা হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে জনসভাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জেলার পাঁচটি স্থানে বড় পর্দার টিভি বসানো হয় যাতে মানুষ খালেদা জিয়ার ভাষণ শুনতে পায়। কুমিল্লা ছাড়াও চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা এতে যোগ দেন। তাদের অনেকের হাতে ধানের শীষ প্রতীক, শহীদ জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি, পোস্টার ও ফেস্টুন ছিল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিলে ব্যান্ডসঙ্গীত দলের উপস্থিতি দেখা গেছে। জনসভা উপলক্ষে দুই শতাধিক মাইক লাগানো হয়। শহরজুড়ে নির্মাণ করা হয় কয়েকশ স্বাগত তোরণ। মঞ্চসহ চারপাশে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সকালের দিকে মঞ্চের সামনে অবস্থান নেয় জামায়াত শিবিরকর্মীরা। পুরো মাঠেও তাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। মানবতাবিরোধী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতাদের মুক্তি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন ছিল তাদের হাতে।
ঢাকা থেকে কুমিল্লা আসার পথে দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, গৌরিপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় সড়কের পাশে ৩০/৪০টি স্বাগত তোরণ ভাংচুর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। খালেদা জিয়া ও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছবি সংবলিত ডিজিটাল ব্যানারসহ পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলে। রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায় এগুলো। মানুষের জনসমুদ্রের মধ্যে টাউন হলের মাঠের আকাশে বড় বড় বেলুন ?ওড়ানো হয়েছে।
দক্ষিণ জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সালাউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকতউল্লা বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুল হক চৌধুরী, যুব দল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এহছানুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহিলা দল সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, স্থানীয় বিএনপি জেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আমিন-উর রশীদ ইয়াছিন, উত্তরের সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা নেতা মোস্তাক মিয়া, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম, জাকারিয়া তাহের সুমন, আবুল কালাম আজাদ, আবদুল গফুর ভঁূইয়া, ড. মোশাররফ হোসেনের ছেলে ড. খন্দাকার মারুফ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জোট নেতাদের মধ্য এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিশের মওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, শাহিদুর রহমান তামান্না, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, ইসলামিক পাটির আবদুল মোবিন, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের গরিবে নেওয়াজ, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ন্যাপ গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, জমিয়তে উলামা ইসলামের মওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, জেলার মহানগর জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, দক্ষিণ জেলা আমীর আবদুস সাত্তার, উত্তর জেলা আমীর মওলানা আবদুল আউয়াল, সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, জাপা নেতা এয়ার আহমেদ সেলিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জনসভা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন কিছুক্ষণ সার্কিট হাউসে অবস্থান করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্য উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'এইচ টি ইমাম, হাসিনাদের ইমাম। তিনি সব জারিজুরি ফাঁস করে দিয়েছেন। কীভাবে ভোটকেন্দ্রে লোক নিয়োগ করা হয়েছে, কীভাবে ব্যালট বাক্স ভরেছে, সব ফাঁস করে দিয়েছেন।'
এইচ টি ইমামের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, 'পাকিস্তান আমলে দুর্নীতির কারণে তার চাকরি গিয়েছিল। তিনি মুশতাক সরকারের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন। হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে এই ইমামই সব কুবুদ্ধি দিয়ে থাকেন। এই ইমামকে নিয়ে ইমামতি করলে সেটা হালাল হবে না। এই ইমামের পেছনে না থাকলেই তাদের ভালো হবে। এইচ টি ইমাম এত বড় সত্য কথা বলার পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়।'
আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, অস্ত্র-বস্ত্র- দুঃখ মোচনের জন্য আন্দোলন।
নিজের ক্ষমতায় না যাওয়ার আগ্রহের কথা প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'আপনারা আমাকে তিনবার প্রধান মন্ত্রী করেছেন। আমরা কাছে ক্ষমতা বড় কিছু নয়। আমি চাই, দেশের মানুষ ভালো থাকুক, দেশে শান্তি ফিরে আসুক।' তিনি বলেন, আমি জানি কুমিল্লার মানুষ আন্দোলনে এগিয়ে। যখনই আমি আন্দোলনের ডাক দেব, তখনই আপনারা সাড়া দেবেন। এবার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
তিনি বলেন, 'আমাদের আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। ভালো কিছু পেতে হলে কিছু কষ্ট করতে হয়। আন্দোলনে আমি আপনাদের সঙ্গে সামনে থাকব। এককাতারে চলি। দেখি কীভাবে পুলিশ গুলি করে। এবার গুলি করে গদি রক্ষা হবে না। যখনই ডাক দেয়া হবে, তখনই সবাইকে আন্দোলনে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ১/১১ সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে ৮ হাজার মামলা একে একে সরকার তুলে নিয়েছে। হাসিনার নামে ১৫টি মামলা ছিল। তাও তুলে নেয়া হয়েছে। হাসিনার নামে ওইসব মামলার মধ্যে জোড়াতালি দেয়া মিগ-২৯ জালিয়াতি মামলা ও পুরনো ফিগ্রেড ক্রয়ের মামলা রয়েছে। ওইসব মামলার বিচার হলে হাসিনার সাজা হতো।
তিনি বলেন, 'আমি হাসিনার কাছে জানতে চাই, ওই সব মামলা কেন উঠিয়ে নিলেন। আপনি নিরপেক্ষ আদালতের মাধ্যমে ফেস করতেন, দেখতাম, কত সাহস। সেজন্যই তো মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের পায়ে ধরেছিলেন। তারা আমার কাছেও এসেছিল, আমি তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।'
খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি-অপশানের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এরা দেশের অর্থনীতিকে স্থবির করে ফেলেছে। যদু-মধুদের নিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদ গঠন করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। এ সময় কয়েকটি পত্রিকার রিপোর্টের উদ্ধৃৃতি দিয়ে বলেন, দেশে বিনিয়োগে বাধা, ব্যাংকের চড়া সুদ, শিল্পকারখানা তৈরি হচ্ছে না। কোনো উন্নয়ন নেই।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ বর্জন করুন। নতুন করে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। এই পরিবর্তন হবে যুব-যুবতীদের কর্মসংস্থান, দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের।'
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের আবারো বিলুপ্ত দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, র্যাব এখন মানুষ খুনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিদেশিদের বলব, যারা আপনাদের দেয়া গুলি-টিয়ারগ্যাস-রাবার বুলেট নিরীহ জনগণের ওপর ব্যবহার করে, তা র্যাব-পুলিশকে দেয়া বন্ধ করুন। তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ ও জাতিসংঘ মিশনে না নেয়ারও আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে র্যাবের উপ-মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকে গুম-খুনের নেপথ্য ব্যক্তি অভিহিত করে অবিলম্বে তার চাকরিচ্যুত ও গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকা-ের সমালোচনা করে তারা 'কন্টাক কিলিং' করছে বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, টাকা দিলে ছেড়ে দেয়, না দিলে খুন হয়। রাস্তাঘাটে, খালে-বিলে কেন এত লাশ পাওয়া যাচ্ছে?
বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি হচ্ছে দুর্নীতি। যত পারো লুটেপুটে খাও। সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেল। তখনই এক ব্যক্তির কাছ ওহি নাজিল হলো। দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতিবাজদের বিচার না করে দায়মুক্তি দিল। এই কমিশন এখন দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে দায়মুক্তি কমিশনে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে লুটপাট চলছে। সেখানেও এভাবে ওহি নাজিল হলে তারা লুটপাটকারীরা বেঁচে যায়। দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে।
খালেদা জিয়া দশম সংসদকে অবৈধ অভিহিত করে বলেন, এরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কেমন হয়েছে। শফিউল আলম প্রধান বলেছেন তা। তার ভাষায় এটি কুত্তা মার্কা নির্বাচন হয়েছে। এ রকম একটি সংসদে কোনো আইন পাসের অধিকার নেই। জোর করে আইন পাস করলে তা টিকবে না। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিসংশন আইনের কঠের সমালোচনা করেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন বিদেশিদের আকৃষ্ট করতেই সরকার জঙ্গি সাজিয়ে নাটক করছে। দাড়ি-টুপি দেখলে তাদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে নাজেহাল করছে। কিন্তু ওইসব দাড়ি-টুপিওয়ালা মানুষ ধর্মের কথা বলে, ইসলাম-ইমানের কথা প্রচার করে। তারা কোনোভাবে জঙ্গি নয়।
যুবলীগ নেতা মির্জা আজমের ভগি্নপতি শীর্ষ জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমানের গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আমলে র্যাবের কর্নেল গুলজারের নেতৃত্বে শায়খ আবদুর রহমান গ্রেপ্তার হয়েছিল বলেই গুলজারকে বিডিআরের পোস্টিং দিয়ে হত্যা করা হয়েছি। এভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মাথায় পিলখানায় ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা জানত বলেই সুধাসদন থেকে কিছুদিন আগে হেয়ার রোডের বাসায় ওঠেন হাসিনা।
খালেদা জিয়া বলেন, খুনিরা এক হয়েছে। খুনের রাজত্ব চলছে। এরশাদ এই সরকারের সঙ্গে। ডা. মিলনকে হত্যা করেছে। নূর হোসেন, জয়নাল, দিপালী সাহা কাদের গুলিতে জীবন দিয়েছে। হাসিনা আজ সব খুনি নিয়ে বসবাস করছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়ার প্রথম কর্মস্থলের স্মৃতিচারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, কুমিল্লায় এসে আমার ভালো লাগছে। কেন জানেন। স্বাধীনতার পর এখানে আমার স্বামীর প্রথম পোস্টিং হয়েছিল। এজন্য কুমিল্লার মানুষের সঙ্গে আমার এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যখনই আমি কুমিল্লা আসি, মনটা আমার ভরে যায়। আমাকে যে সম্মান আপনারা দিয়েছেন, সেজন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মুক্তি এবং ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মো. মোফাজ্জল হোসেইন কায়কোবাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান খালেদা জিয়া। -যায় যায় দিন
No comments:
Post a Comment