
সোমবার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সংসদে তুমুল ঝড় তুললেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জিয়া উদ্দিন বাবলু, হাজি সেলিম, রুস্তম আলী ফরাজী, আবুল কালাম আজাদ এবং এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন।
সংসদ সদস্যরা লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলে স্পিকারের রুলিং এবং তার গ্রেফতারের দাবি জানান।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংসদ সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী মৌলবাদিদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তিনি মৌলবাদিদের পক্ষে কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।”
বাবলু বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী ধর্মী অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। এমন একজন ব্যক্তি কি করে বিনা বাধায় বিমান বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করলেন। তার প্রশ্ন, এতো বাহিনীর লোকজন থাকার পরও কিভাবে লতিফ সিদ্দিকী গ্রেফতার এড়িয়ে চলে গেলেন।”
হাজি সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বিমান বন্দরে কি কাজ করেন ?”
উদাহরণ টেনে সেলিম বলেন, “তিনি যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন বিদেশে চিকিৎসা সেবার জন্য বিমান বন্দরে গেলে তাকে গোয়েন্দা সংস্থার বহু সদস্য ঘিরে ধরেন। তার মনে হচ্ছিল, গোয়েন্দা সংস্থার এই বিপুল সংখ্যক সদস্য সিংহ আর তিনি শিকারে পরিণত হওয়া একটি হরিণ।”
হাজি সেলিম যোগ করেন, “ভারত থেকে যে বিমানে লতিফ সিদ্দিকী ঢাকায় ফিরেছেন সেই বিমানের প্যাসেঞ্জার তালিকা আগেই বিমান বন্দরে আসে। তাহলে কেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আগে থেকে লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরা সম্পর্কে জানতে পারল না।” তারা বিমান বন্দরে আসলে কী করেন এমন প্রশ্ন তোলেন সেলিম।
তার জানা মতে লতিফ সিদ্দিকীকে দেশে ফিরতে প্রধানমন্ত্রী গ্রিন সিগন্যাল দেয়নি। স্পিকার তার সংসদ সদস্য থেকে বহিষ্কার করবেন কিনা তা দেশবাসিকে জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “কোন সাহসে লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরলেন সেই প্রশ্ন দেশবাসীর। সে হজ ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে প্রধানমন্ত্রীকে বিপদে ফেলেছেন, সরকারকে সমালোচনার মুখে দাঁড় করিয়েছেন। ধর্ম অবমাননার জন্য তার বিচার হওয়া জরুরি।”
লতিফ সিদ্দিকীকে আইনের আওতায় আনতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সেলিম। তার সদস্য পদ থাকবে কিনা তার জন্য স্পিকারের রুলিং দাবি করেন তিনি।
এদিকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরায় সরকারের কিছু করার নেই। কারণ তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়নি। সংবিধানের কার্যপ্রণালীর ১৭৪ বিধিতে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র সংসদ এলাকায় তাকে গ্রেফতার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি লাগবে।”
সুরঞ্জিত বলেন, “এখন লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো আদালত থেকে যে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তা পুলিশের কাছে পৌঁছানোর পর পুলিশই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। এখন যা কিছু করার তা আদালত করবে। আমরা আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি। আদালত যে নির্দেশ দেবে তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।”
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও ব্যথিত। কারণ আওয়ামী লীগ প্রতিটি মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”
লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেফতারকে ঘিরে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেই ঘোলা পানিতে যদি কেউ মাছ শিকারের চেষ্টা করে এবং রাজনীতি ও অর্থনীতি অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করে তা খুব বেশি লাভ হবে না বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আইনগত যে সব ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংসদকে জানান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। তবে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment