হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় লতিফ সিদ্দিকীকে গতকাল দুপুরে আদালতে
নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাল হয়ে ওঠে আদালতপাড়া। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা লতিফ
সিদ্দিকীকে উদ্দেশ্য করে নানারকম স্লোগান দিতে থাকে। ‘লতিফ সিদ্দিকীর দুই
গালে/জুতা মারো তালে তালে’ বলে স্লোগান দেয়া হয়। তাকে লক্ষ্য করে দেখানো হয়
জুতা। নিক্ষেপ করা হয় থুতু। বিকালে তাকে যখন আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে করে
কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন একদল আইনজীবী হাতে জুতা নিয়ে
প্রিজনভ্যানের গায়ে আঘাত করতে থাকেন। কেউ ঝাড়ু হাতেও প্রিজনভ্যানে আঘাত
করেন। ভ্যানের উপরের নেটের অংশ দিয়ে ভেতরে থুতু নিক্ষেপ করার চেষ্টাও করেন
কেউ কেউ। পরে পুলিশ প্রিজন ভ্যানের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষুব্ধ
আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগার অভিমুখে চলে যায় প্রিজন ভ্যানটি।
মঙ্গলবার লতিফ সিদ্দিকী আদালতে হাজির হলে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আর তিনি নিজেও কোনো জামিন আবেদন করেননি। এ সময় আদালতে বিপুল পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে দেখা গেছে। তার বিরুদ্ধে মামলাকারী এডভোকেট আবেদ রেজা বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী পুরো ২’শ কোটি মুসলমানের হৃদয়ে আঘাত করেছেন। আমি তাদের প্রতিনিধি হিসেবে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। আজ তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। এডভোকেট রেজা আরো বলেন, এহেন ঘটনায় আমরা তার প্রতি ঘৃণা জানাই। তাকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। যাতে করে ভবিষ্যতে অন্য কেউ ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এমন স্পর্ধা দেখাতে না পারে। দু’দিন কোথায় ছিলেন? আত্মসমর্পণের পর প্রশ্ন উঠে, কলকাতা থেকে ঢাকায় আসার এই দু’দিন কোথায় ছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। রোববার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন তিনি। কিছুক্ষণ অবস্থান করেন বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দোলনচাঁপায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলভার কালারের একটি গাড়িতে তিনি বেরিয়ে যান বিমানবন্দর থেকে। গণমাধ্যমকে ফাঁকি দেয়ার জন্য বেরিয়ে যান অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের গেট দিয়ে। এ দু’দিন তিনি অনেকটা অজ্ঞাতবাসেই ছিলেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরা লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। তাকে গ্রেপ্তারে স্পিকারের অনুমতি লাগবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এমন দাবির প্রেক্ষিতে স্পিকার বিষয়টি খোলাসা করে দেন। বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই। পরে সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে ডেকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এরপর তোড়জোড় শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে। এর আগে নানারকম অজুহাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি এড়িয়ে যান। বলেন, সরকারের ‘সবুজ সঙ্কেত’ পেলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। সোমবার রাতে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা পাওয়ার পর উত্তরা এলাকায় হন্যে হয়ে লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান জানার চেষ্টা করেন গোয়েন্দারা। এমনকি তাকে বহনকারী গাড়িটিও চিহ্নিত করা হয়। পরে জানা যায় ধানমন্ডির ১২ নম্বর সড়কের একটি বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আত্মসমর্পণ না করলে মঙ্গলবার রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। উল্লেখ্য, গত ২৮শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ, মহানবী (সা:) ও সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে কটূক্তির পরপরই তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ইসলামী দলগুলো আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেয়। এরপর টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। পরে দল থেকেও বহিষ্কৃত করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এই সদস্যকে। এ ঘটনার পর লতিফ সিদ্দিকী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের কলকাতায় গিয়ে অবস্থান করেন। গত রোববার রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে হঠাৎ করেই ঢাকায় হাজির হন তিনি। টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকী পরিবারের জ্যেষ্ঠ ভাই ৭৭ বছর বয়সী লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। গত মহাজোট সরকারের আমলে তিনি পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। |
Tuesday, November 25, 2014
লতিফ সিদ্দিকীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে জুতা মিছিল
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment