Wednesday, April 22, 2015

সরোয়ার কোথায়? গুম না আত্মগোপনে?

BARISHAL-BNP-finalবরিশাল: বরিশাল বিএনপির নীতি নির্ধারক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভেকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের দেখা মিলছে না দীর্ঘদিন ধরেই। অনেকটা আকস্মিকভাবেই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন ওই নেতা। বিশেষ করে সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হওয়ার পরই তার অবস্থান নিয়ে রহস্য দেখা দেয়।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, অ্যাডভোকেট সরোয়ারের বর্তমান অবস্থান কারো কাছে পরিষ্কার নয়। বরং তিনি গুম হয়েছেন কিনা উল্টো তাদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছে এ প্রশ্ন রাখা হচ্ছে। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে তার গুম হওয়া বিষয়ে দাবি বা অভিযোগ এখনও ওঠেনি। শুধু দলের ভেতরেই বিষয়টি নিয়ে দিনকে দিন কানাঘুষা জোরদার হচ্ছে।
এদিকে, অ্যাডভেকেট মজিবরের অন্তর্ধানকে বরিশাল প্রশাসন পলাতক হিসেবেই দেখছে। সে ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় এই নেতাকে রাজধানীতে ঘুরতে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু কোনো মহলই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না আসলে তিনি কোথায়? এর ফলে বিএনপির এই ডাকসাইটে নেতাকে নিয়ে দলের ভেতরের একাংশে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অন্য অংশে ক্ষোভ পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। দলীয় সমালোচকরা বলছেন, আন্দোলন জোরদার করতে ব্যর্থ হওয়ার পর নিজেকে সেইফসাইডে রাখতে আত্মগোপনে রয়েছেন ওই নেতা।
বলা বাহুল্য, বরিশাল রাজনীতিতে আপোষহীন নেতা হিসেবে পরিচিত অ্যাডভেকেট মজিবর রহমান সরোয়ার সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরুর প্রথম দিকে রাজপথে অতীতের মতো ভূমিকা রাখেন। দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে সক্রিয় রাখতে বেশ পদক্ষেপও নেন। কিন্তু আন্দোলন রুক্ষতে সরকারের কৌশলগত ও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর আটক অভিযান শুরু হলে বরিশালের প্রেক্ষাপটে অনেকের মতো সরোয়ারও নিজেকে রক্ষার পথে অগ্রসর হন। কারো কারো ভাষায় তিনিও পাল্টা কৌশলও নেন। অর্থাৎ আগামীর চিন্তায় আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় না গিয়ে বা রাজপথে না থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখেন।
এদিকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কয়েক দফায় তার কাউনিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে রেকি দিলে হঠাৎ করে তিনি নেতাকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এক্ষেত্রে প্রথমে ভাবা হয়েছিলো তিনি বরিশালেই আছেন, তবে আত্মগোপনে। এ সময় দলীয় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে নিত্যদিন যোগাযোগ রাখায় ওই ধারনা বধ্যমূল হয়।
পরবর্তীতে একটি নাশকতার মামলায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের আসামি এবং গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হলে সেই থেকে দলীয় এ কাণ্ডারির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি প্রথমে দলের ভেতরে সীমাবদ্ধ ছিলো। তখন বলা হতো একটি নাশকতার মামলায় আসামি হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতা সরোয়ার প্রশাসনের প্রথম টার্গেট হওয়ায় আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এর পর থেকে গত সাড়ে তিন মাস ধরে তাকে আর বরিশালে দেখা যাচ্ছে না।
নেতা লাপাত্তা হওয়ার পর দলের শক্তি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি বরিশালে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম স্তিমিত হয়ে পড়ে। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে যে সকল নেতা রাজপথে অনপুস্থিত তাদের সম্পর্কে সতর্ক বার্তা দেয়ার পরেও সরোয়ারকে আর সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে দলের ভেতরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য তাকে দোষারোপ করা হয়। তবে সরোয়ার অনুসারীরা দাবি করেন, নেতা পলাতক নয়, কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক নিন্দুকেরা সরোয়ার অনুসারীদের মন্তব্যকে স্টান্ডবাজি হিসেবে উল্লেখ করে বলছেন, বরিশাল বিএনপির নীতি নির্ধারক সরোয়ার এক ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অবসম্ভাবী ভাবলেও বর্তমানে প্রশাসনের হাত থেকে রক্ষায় আপাতত নিজেকে নিরাপদ রাখতে অন্তরালে চলে গেছেন। যে কারণে তার সেল ফোন বন্ধ রেখে বিকল্পভাকে খুব ঘনিষ্ট লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এ মন্তব্যের সপক্ষে বিরোধী শিবির অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কুশীলবদের যুক্তি হচ্ছে, যদি তিনি স্ব-ইচ্ছায় আত্মগোপনে নাই চলে যান তাহলে তার পরিবার থেকে নিখোঁজ দাবি করা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নে তার স্ত্রী নাসিমা সরোয়ারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি সরোয়ার ঘনিষ্ট অনেক নেতাকর্মী বা শুভাকাঙ্ক্ষিও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।
এদিকে, বরিশাল মহানগর বিএনপির নির্ভরযোগ্য বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, সরোয়ার ঢাকায় আছেন। তাকে গেল শুক্রবার গুলশানের একটি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। এরপর একটি প্রাইভেটকারে চলে যেতে দেখা গেছে। বর্তমানে তিনি ঢাকায় হাইকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার জন্য সিনিয়র এক আইনজীবীর সঙ্গে নিয়মিত চেম্বারে যাতায়াত করছেন। বরিশাল থেকে ঢাকায় আশ্রিত তার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও করছেন।
এছাড়া সর্বশেষ গেল সোমবার সরোয়ার ঢাকা সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের সাথে তার বাস ভবনে বরিশাল বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে দেখা করেছেন।
বরিশাল মহানগর বিএনপির একটি সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের ইঙ্গিতেই তিনি আত্মগোপনের মতো অবস্থান নিয়েছেন। সূত্রের দাবি মতে, সরোয়ারের বর্তমান কর্মকাণ্ডে নাখোশ দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের চেষ্টা করছেন। এরপর আইনী জটিলতা পার করেই তিনি বরিশাল ফিরতে পারেন।
তবে সূত্রের এসব তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে নানামুখী চেষ্টা করেও অন্তর্ধান সরোয়ারের অবস্থান নিরূপন করা যায়নি। ফলে ওই নেতাকে নিয়ে বরিশাল বিএনপিতে তৈরি হয়েছে গোলকধাঁধা।

No comments:

Post a Comment